অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল হামাস আন্দোলনের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে জানিয়েছে: ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শাহাদাতের পর, এই আন্দোলন এখনও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং আরো নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে। তারা ইরসরাইলকে একটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে।
গত বছর ১৮ অক্টোবর গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় দখলদার ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষের সময় হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার শহীদ হন। ইসনার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, শহীদ “ইয়াহিয়া সিনওয়ার” ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আল-আকসা ঝড় অভিযানের কমান্ডার হিসাবে পরিচিত। গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব হিসাবে হামাস ওই অভিযান চালিয়েছিল। হামাসের এই অভিযানের অজুহাতে ইসরাইল গাজা উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি শহীদ এবং লাখ লাখ মানুষ আহত হয়েছে।
মার্কিন দৈনিক “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল” এক প্রতিবেদনে শহীদ ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই ও হামাসের আরেক সিনিয়র সদস্য “মোহাম্মদ সিনওয়ারের” সাহসিকতার কথা উল্লেখ করে লিখেছে: “হামাসের ক্ষমতার শীর্ষে আরেকজন সিনওয়ার রয়েছে এবং তিনি হামাসকে আবোরো পুনরুজ্জিবীত করার চেষ্টা করছেন।
এই মার্কিন গণমাধ্যম হামাসের ক্ষমতা এবং সামরিক শক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে: “হামাস একটি নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান বাহিনী তৈরি করে চলেছে, এবং তারা গাজায় অবিস্ফোরিত ইসরাইলি গোলাবারুদ থেকে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক তৈরি করতে পারে। হামাস এই বিস্ফোরকগুলোকে ইসরাইলের ক্ষতির কাজে ব্যবহার করে। সম্প্রতি গাজার উত্তরে বেইত হানুন এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ১০ জনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে হামাস। এ ছাড়া তারা সম্প্রতি ইসরাইলের দিকে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরো লিখেছে, “মোহাম্মদ সিনওয়ার-এর নেতৃত্বে নতুন বাহিনী নিয়োগের বিষয়টি ইসরাইলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে; কেননা ইসরাইলি সেনাবাহিনী কয়েক মাসে যেসব এলাকায় অগ্রসর হয়েছিল এখন সেখান থেকে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী একদিকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অন্যদিকে, ইসরাইলি বন্দীদের জীবনও হুমকির মধ্যে রয়েছে।”
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল “ওমির আভিভি” স্বীকার করেছেন, “আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি যেখানে হামাসের বাহিনী পুনর্গঠনের গতি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অগ্রগতির চেয়েও দ্রুততর এবং মোহাম্মদ সিনওয়ার সবকিছু পরিচালনা করছেন।
তবে হামাস আন্দোলনের মুখপাত্র এখনও মার্কিন দৈনিক “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল” এর এই প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিখেছে: “হামাসকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছেন মোহাম্মদ সিনওয়ার। অক্টোবরে ইসরাইলি সৈন্যরা যখন তার ভাইকে হত্যা করে, তখন কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত হামাস কর্মকর্তারা নতুন নেতা নিয়োগের পরিবর্তে একটি যৌথ নেতৃত্ব পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আরব মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন, গাজার হামাসের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি এবং এখন ছোট সিনওয়ারের অধীনে স্বায়ত্তশাসিতভাবে তারা কাজ করছেন।”
এই মার্কিন দৈনিকটি আরো লিখেছে, “মোহাম্মদ সিনওয়ারের বয়স প্রায় ৫০ বছর বলে মনে করা হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার বড় ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করেছেন, যিনি তার চেয়ে ১০ বছরেরও বেশি বয়সী ছিলেন। ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো, তিনিও অল্প বয়সে হামাসে যোগদান করেছিলেন। হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফেরও ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে পরিচিত। ইয়াহিয়া সিনওয়ার দুই দশকেরও বেশি সময় ইসরাইলের কারাগারে কাটিয়েছেন। কিন্তু তার ছোট ভাই এতো দীর্ঘদিন সময় ইসরাইলি কারাগারে ছিলেন না। তাই তিনি খুব কম পরিচিত মুখ ছিলেন এবং বেশিরভাগ সময়ে পর্দার আড়ালে কাজ করেছেন। কঠিন সংগ্রামী হয়েও অপরিচিত মুখ হওয়ার কারণে আরবরা তাকে “ছায়া” নামে ডাকত।
ইসরাইলের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা তাকে খুঁজে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ সিনওয়ারকে এখন “গাজায় হামাসের সর্বোচ্চ কমান্ডার” হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
মার্কিন দৈনিক “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল”এর প্রতিবেদনে হামাস বাহিনীতে যোদ্ধাদের সংখ্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ইসরাইলি এবং আরব কর্মকর্তাদের মতে হামাস এখনও গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে তারা এ পর্যন্ত কতজন যোদ্ধা হারিয়েছে কিংবা নতুন কতজনকে নিয়োগ দিয়েছে তা জানা যায়নি।
আরব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরো বলেছে: “মোহাম্মদ সিনওয়ার স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তার বড় ভাইয়ের চেয়ে বেশি আপোসহীন অবস্থায় রয়েছেন।”
এ প্রসঙ্গে দৈনিকটি আরো বলেছে, কয়েক মাস ধরে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রচেষ্টা চলছে তার আওতায় ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো বিশেষ করে মিশর ও কাতার, মার্কিন সরকারের সমন্বয়ে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য হামাস এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত বছর, মোহাম্মদ সিনওয়ার মধ্যস্থতাকারীদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন: “হামাস তার শর্ত বাস্তায়নে খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। যদি এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হয় এবং গাজার জনগণের দুর্ভোগের অবসান না ঘটে তাহলে হামাস তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
Leave a Reply